নীলাভ রায়: ঘোড়ার চিহিহি আওয়াজে দাড়োয়ান গেটের আগল খুলে দিল। বিশ্বসংস্কৃতির ভাবী প্রাণকেন্দ্রে মৃদু পদক্ষেপে প্রবেশ করছেন যুগাবতার। মুদ্রিত কোন আমন্ত্রণ পত্র না থাকলেও অধ্যাত্মবাদের এদিনের বিরল বিনিময় লেখা হবে ইতিহাসে। স্থান : জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। সময়: ১৮৬৬। যেন আড়ম্বরহীন আলোচনা সভায় উপস্থিত দুই তারকা বক্তা। দক্ষিণেশ্বরের প্রধান যেন সঞ্চালক হয়ে তার হিন্দু কলেজের সহপাঠীর সাথে আলাপ করিয়ে দিচ্ছেন কামারপুকুরের এক গেঁয়ো জ্ঞানীর। ঈশ্বরোন্মাদ। একটি শব্দে দক্ষিনেশ্বরের কালী পূজারীকে দেখিয়ে ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতাকে চিনিয়ে দিচ্ছেন মথুরামোহন বিশ্বাস। প্রথম দর্শনেই মহর্ষির মধ্যে সাধকের লক্ষণ প্রত্যক্ষ করছেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ। ‘কলির জনক রাজা’ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অদ্বৈতবাদের মধ্যে নিহিত সত্য Law of Revelation এর সরল ভাষ্যে বুঝিয়ে দিচ্ছেন পরমহংস। কখনো কবীরের ” কাকো নিন্দো, কাকো বন্দো, দোনো পাল্লা ভারী..”। আবার কখনো “জ্ঞানের গরমিতে ভক্তি বরফ জল হয়”। উপমার কথামৃত পান করছেন ৪৯ বছরের দেবেন ঠাকুর। ” যাই সাকার, তাই নিরাকার”। মুছে যাচ্ছে সগুণ-নির্গুণের মাঝে আঁকা সরলরেখা। সংগীতের অলিন্দে আঁকা হচ্ছে মিলনের এক তুরীয় ছবি । পরজ রাগে যে অলিন্দে বেজে উঠবে দেবেন ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্র সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা, “কে রচে এমন সুন্দর বিশ্বছবি..”। ঠাকুরের আবদার। ” যতো বাচো নিবর্তন্তে..”। আবদার রাখতে কঠোপনিষদের অনুবাদক আওড়ালেন তৈত্তিরীয় উপনিষদের শ্লোক। অপার আনন্দ গ্রথিত হল দুই মনীষীর হৃদয়মালায়। সাক্ষী থাকল ব্রাহ্মধর্মের পীঠস্থান। মেঘের কোলে সূর্য ঢলে পড়তে ব্রাহ্মসমাজের উৎসবে আসার জন্য দেবেন ঠাকুরের আমন্ত্রণলিপি ঠাকুরকে পড়ে শোনাচ্ছেন তাঁর ভক্ত। বেদীর সামনে মগ্ন উপাসক। সেজের আলোয় উপাসনা গৃহে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে–“পরিপূর্ণানন্দম অঙ্গবিহীনং..”
যুগাবতার ও মহর্ষি
