তাপস রায়: শিল্প, সাহিত্যের অপার আবাহনে মগ্ন হয়ে উঠেছিল বিশ্বভারতীর লিপিকা প্রেক্ষাগৃহ। কারণ একটাই—বিশ্ববরেণ্য ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত হল এক অনন্য গ্রন্থ প্রকাশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কলকাতার সুপরিচিত ‘তুহীনা প্রকাশনী’-র উদ্যোগে আয়োজিত এই আয়োজনে ধ্বনিত হলো শিল্পের প্রতি শ্রদ্ধা, সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা, আর রবীন্দ্র-সুরের মধুর আবেশ।
প্রকাশিত হল তিনটি মননশীল গ্রন্থ—ড. অনিন্দ্যকান্তি বিশ্বাসের ‘স্ব-ভাবে রামকিঙ্কর’, ডা. গৌতম দাসের ‘চাইল্ড স্পেশালিস্ট এবং আপনি’, এবং ডা. সুদীপ্ত দাসের ‘দশটি কিশোর গল্প সংকলন’। এই তিনটি ভিন্নস্বাদের রচনার মোড়ক উন্মোচন করেন প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক বিনয় সরেন, বিশিষ্ট শিল্পী অধ্যাপক শিশির সাহানা, অধ্যাপিকা কল্পিকা মুখোপাধ্যায় ও এভারেস্টজয়ী শ্রী বসন্ত সিংহ রায়। উপস্থিত ছিলেন তিন গ্রন্থকার নিজরাও।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় শান্তিনিকেতনের সমবেত শান্তিনিকেতন শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনায় ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে। সুরের মাধুর্যে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বেই দর্শক-শ্রোতাদের মন জয় করে নেয় এই পরিবেশনা, যার পরিচালনায় ছিলেন বিশ্বভারতীর সঙ্গীত ভবনের অধ্যাপিকা বুলবুল বসু।
রামকিঙ্করের শিল্পভাবনা ও ব্যক্তিত্ব নিয়ে অতিথিবৃন্দের মনোজ্ঞ বক্তব্য অনুষ্ঠানকে করে তোলে এক গভীর চিন্তামূলক আলোচনার পরিসর। অতিথিরা স্মরণ করেন কীভাবে রামকিঙ্করের কাজ আজও প্রাসঙ্গিক, সমাজ ও শিল্প-চর্চায় তাঁর অবদান অনন্য।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় প্রাণসঞ্চার করেন স্বপ্নতরী ড্যান্স একাডেমি-র শিল্পীরা তাঁদের রবীন্দ্রনৃত্যে। কবি শিবসৌম্য বিশ্বাস পাঠ করেন রামকিঙ্কর-প্রসঙ্গে তাঁর স্বরচিত কবিতা। বাচিক শিল্পী ত্রিপর্ণা চট্টোপাধ্যায়ের আবৃত্তি এবং লোক প্রজ্ঞা বোলপুর চর্চা কেন্দ্র-এর পরিবেশিত গান ‘জনসেবা যে কর্ম আমাদের’ যেন সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের বার্তাই তুলে ধরল।
অনুষ্ঠানটি সুচারুরূপে সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষক মিলন দে।
এই মনোজ্ঞ আয়োজনের মূল রূপকার প্রকাশক হিমাংশু মাইতি তাঁর আন্তরিক উদ্যোগ ও বিনয়ী আতিথেয়তায় সকলের প্রশংসা অর্জন করেন। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অনুষ্ঠানকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যান।
দুপুর দুটোয়, দেবাশীষ ঘোষের পরিবেশিত জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।
অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিকল্পনা ও সহযোগিতায় ছিলেন ভাষা ভবনের উপাধ্যক্ষ ড. তপু বিশ্বাস, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক গীতিকণ্ঠ মজুমদার এবং অধ্যাপক ঋতব্রত ভট্টাচার্য—যাঁদের নিঃশব্দ শ্রমেই এই অনুষ্ঠান পেল প্রাণ।