তাপস রায় কলকাতা:একসময় ‘ক্যান্সার’ শব্দটি মানেই ছিল ভয়, আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা। রোগী তো বটেই, তাঁর পরিবারও ডুবে যেত হতাশার অন্ধকারে। কিন্তু সময় বদলেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রগতিতে এখন ক্যান্সারকে রোখা যায়, হারানো যায় জীবন থেকে তার কালো ছায়া। তবে এর জন্য প্রয়োজন সময়মতো সঠিক চিকিৎসা, মানসিক দৃঢ়তা এবং সমাজজুড়ে সচেতনতার জাল বিস্তার।
নিউ আলিপুরের বি.পি. পোদ্দার ক্যান্সার হসপিটালে সোমবারের সকালটা ছিল এমনই কিছু ক্যান্সারজয়ীর উপস্থিতিতে উজ্জ্বল। তাঁরা ছিলেন জীবন্ত প্রমাণ, ক্যান্সার মানেই শেষ নয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বেহালার পর্ণশ্রীর বাসিন্দা স্বপন দেবনাথ, একজন প্রবীণ সাহিত্যিক ও আবৃত্তিকার। বয়সজনিত কারণে প্রস্টেটের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি, কিন্তু দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। একাধিক পরীক্ষার পর ধরা পড়ে প্রস্টেট ক্যান্সার, যদিও সেটি ছিল একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে। সময়মতো ধরা পড়ায় জটিলতা তৈরি হয়নি। ডাক্তার অম্লান চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে সাত ঘণ্টার ম্যারাথন অস্ত্রোপচারে কেটে যায় ভয়াবহতা। এরপর কয়েক মাস ইনজেকশন ও পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে যেতে হলেও আজ তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। স্বপনবাবু বলেন, “ক্যান্সার মানেই জীবন শেষ—এই ধারণাটাই ভুল। মানসিক শক্তি আর সচেতনতাই সবচেয়ে জরুরি। এখন চিকিৎসা এতটাই উন্নত যে গোড়ায় ধরতে পারলে ক্যান্সারও পরাজিত হয়।”
এমনই অভিজ্ঞতার কথা উঠে এসেছে আরও অনেকের মুখে। সুনন্দা কুন্ডু, রাজা নস্কর—তাঁরাও লড়াই করেছেন এই কঠিন রোগের সঙ্গে এবং ফিরে এসেছেন জীবনের মূল স্রোতে। কারও অস্ত্রোপচার, কারও রেডিওথেরাপি, কারও দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ—প্রতিটি লড়াইয়ের পেছনে ছিল সাহস আর আস্থা।
হাসপাতালের গ্রুপ অ্যাডভাইজার সুপ্রিয় চক্রবর্তী বলেন, “ক্যান্সারকে ভয় নয়, বোঝা দরকার। ৩৫-৪০ বছরের পর থেকে নিয়মিত চেক-আপ করানো উচিত। পরিবারের কারও ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে আরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ, প্রাথমিক ধাপেই যদি রোগ ধরা পড়ে, তা হলে আধুনিক চিকিৎসায় আর চিন্তার কিছু থাকে না।”
এই সমস্ত ক্যান্সারজয়ীদের মুখে মুখে উচ্চারিত হল একটাই বার্তা—ভয় নয়, সচেতনতা চাই। আর চাই সময়মতো চিকিৎসা। স্বপনবাবু যখন আবৃত্তি করছিলেন, তখন যেন মনে হচ্ছিল, জীবনের জয়গান চলছে। একসময়ের মৃত্যুভয় আজ জায়গা করে দিয়েছে নতুন ভোরের আশায়। আলো ফিরে আসে—এই সত্যিই যেন আজ প্রমাণিত।