তাপস রায় ,কলকাতা: সুখোই-৩০-এর চাকা বয়ে আনছে শান্তির রথ
কলকাতায় ৫৪তম ইসকন রথযাত্রা: যুদ্ধের ছায়ায় জেগে উঠছে ভক্তি ও বিশ্বশান্তির বার্তা
কলকাতা, ২৫ জুন, ২০২৫: যুদ্ধবিমান সুখোই-৩০-এর চাকা, যা একসময় আকাশে যুদ্ধের তীব্রতা সামাল দিত, এবার সেই চাকা বয়ে নিয়ে চলবে জগন্নাথদেবের রথ — এক অভূতপূর্ব বার্তা নিয়ে: শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক।
বিশ্ব যখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্কে উদ্বিগ্ন, ঠিক সেই সময়ে কলকাতা প্রস্তুত এক অনন্য আহ্বানে — ভক্তি, ঐক্য ও শান্তির এক মহোৎসব। ইসকন কলকাতার উদ্যোগে আয়োজিত হচ্ছে ৫৪তম রথযাত্রা, যা কেবল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একত্রিত হওয়ার আন্তর্জাতিক মঞ্চ।
এই বছর রথে প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার গর্ব, সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান-এর চাকা। এটি প্রতিস্থাপন করেছে ঐতিহাসিক Boeing 747-এর চাকাকে, যা ১৯৭৭ সাল থেকে রথযাত্রায় ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। এই প্রতীকী পরিবর্তন যেন স্মরণ করিয়ে দেয় — প্রকৃত শক্তি আসে ভক্তির মাধ্যমে, অহিংসার মাধ্যমে।
রথযাত্রা শুরু হবে শুক্রবার, ২৭ জুন, দুপুর ১টা থেকে, ইসকন মন্দির (আলবার্ট রোড) থেকে। উল্টোরথ শুরু হবে শনিবার, ৫ জুলাই, দুপুর ১২টা থেকে, আউটরাম রোড (পার্ক স্ট্রিট মেট্রোর সামনে)। রথ পৌঁছাবে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে, যেখানে শুরু হবে এক সপ্তাহব্যাপী মহামেলা।
এই বছরের রথ তিনটি রথেই আছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। জগন্নাথের রথ ৩৮ ফুট উচ্চতার এবং এতে এবার প্রথম সংযুক্ত হয়েছে সুখোই-৩০-এর চাকা। সুভদ্রার রথ ছোট, ভাঁজযোগ্য এবং লোহার চাকাযুক্ত। বলরামের রথ ৩৬ ফুট উচ্চতার, এবং চারটি সাড়ে ছয় ফুটের লোহার চাকায় ভর করে এগিয়ে চলবে।
দক্ষ দক্ষিণ ভারতীয় শিল্পীদের তৈরি রঙ্গোলী, আন্তর্জাতিক সংকীর্তন দলের গান, শিশুদের আনন্দ-আয়োজন ও লক্ষ লক্ষ ভক্তের উপস্থিতিতে এই রথযাত্রা রূপ নেবে এক আধ্যাত্মিক জনস্রোতে।
২৮ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে চলবে বর্ণাঢ্য মহামেলা। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে খিচুড়ি প্রসাদ পরিবেশন করা হবে এবং সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, কীর্তন ও আধ্যাত্মিক আলোচনা। উপস্থিত থাকবেন পদ্মশ্রী প্রাপ্ত শিল্পীরা ও ডোনা গাঙ্গুলীর নৃত্যদল।
৩ জুলাই ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে রথের দর্শন ও আরতি করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রার্থনা করবেন বাংলার, ভারতের ও সারা বিশ্বের শান্তি ও কল্যাণের জন্য।
এই অস্থির সময়ে, কলকাতার রথযাত্রা মনে করিয়ে দেয় — যুদ্ধের চাকার থেকেও শক্তিশালী হল আস্থা, একতা ও ভক্তি। আর সেই শক্তিতেই গড়ে উঠুক এক শান্তিপূর্ণ বিশ্ব।